এটা কার জন্য উপযোগী?
প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তাদের অভিভাবক, পরিচর্যাকারী।
শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা একইসাথে দেখতে ও শুনতে পায় না। দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদনে বিশেষ করে চলাচলে অন্যান্য অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির তুলনায় তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
এই রিসোর্সে মূলত একজন শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কীভাবে নিরাপদে চলাচল করতে পারবে সে বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপদ চলাচল বা ওরিয়েন্টেশন ও মবিলিটি
ওরিয়েন্টেশন এর আভিধানিক অর্থ হলো পরিচিতি। এটি হচ্ছে পরিবেশের বিভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ওরিয়েন্টেশন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যা পরিবেশ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে সঠিক পথ অনুসরণ করতে সাহায্য করে। শ্রবণ, স্পর্শ, গন্ধ ইন্দ্রিয়ের সহায়তায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিজেদের অবস্থান ও তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারে। এটি একটি দক্ষতা।
মবিলিটির আভিধানিক অর্থ হলো চলাচল। মবিলিটি হচ্ছে এমন একটি দক্ষতা যার মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিরাপদে স্বাধীনভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পারে। যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে তা ওরিয়েন্টেশন ও মবিলিটি নামে অভিহিত।
ওরিয়েন্টেশন ও মবিলিটি প্রশিক্ষণের দক্ষতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে, যেমন:
১. ভূমি চিহ্ন LANDMARK- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ কোন স্থান বা জায়গা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে যে স্থায়ী চিহ্ন ব্যবহার করেন, যেমন- গাছ, মসজিদ, স্কুল, দোকান ইত্যাদি।
২. যোগসূত্র CLUE- এটি এক ধরনের অস্থায়ী চিহ্ন যার মাধ্যমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন, যেমন- আযান, খেলার মাঠের হৈ চৈ, সানাইয়ের শব্দ, ডাস্টবিনের গন্ধ ইত্যাদি।
৩. পথ নির্দেশক GUIDELINE- সঠিক পথে চলার জন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হাত, পা, সাদা ছড়ি ব্যবহার করে রাস্তার কিনারা, রাস্তার পাশের দেয়াল অনুসরণ করে পথ চলেন। অনুসরণীয় রাস্তার কিনারা বা দেয়ালই হচ্ছে গাইড লাইন।
নিরাপদ চলাচলের প্রয়োজনীয়তা:
১. আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করে
২. নিজের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করে
৩. সঠিক ভঙ্গিমায় হাঁটতে সাহায্য করে
৪. কর্মক্ষেত্র বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে
৫. ইন্দ্রিয় প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরী করে
৬. পরিবার ও সমাজে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।
নিরাপদ চলাচলের কৌশলসমূহ:
নিরাপদ চলাচলের ৪টি কৌশল-
ক. চক্ষুষ্মান ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে চলাচল (Sighted guide technique)
খ. সাদা ছড়ির সাহায্য নিয়ে চলাচল (White cane technique)
গ. চক্ষুষ্মান ব্যক্তি ও সাদা ছড়ি ব্যতীত একা একা চলাচল (Independent/protective technique)
ঘ. প্রশিক্ষিত কুকুরের সাহায্য নিয়ে চলাচল (Guide dog technique)
ইউরোপ, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় প্রশিক্ষিত কুকুর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের গাইড হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে উন্নয়নশীল দেশসমূহে এই পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়না। গাইড ডগ কৌশল ব্যবহৃত না হওয়ার কারণ-
১. প্রশিক্ষিত কুকুরের অভাব;
২. কুকুর পালনে অতিরিক্ত ব্যয়;
৩. ধর্মীয় কারণ;
৪. জনাকীর্ণ স্থান ও ট্রাফিক নিয়মের অভাব;
৫. রাস্তার অন্যান্য কুকুরের ভয়।
ডাউনলোড
- প্লেইন টেক্সট (ওয়ার্ড)